

করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের সম্পর্ক আছে এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ার পর ব্রিটেনে মোবাইল ফোন টাওয়ারগুলোতে একের পর এক রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বার্মিংহাম, লিভারপুল ও মার্সিসাইডে ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ারে এরকম আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একটি মোবাইল ফোন টাওয়ারে আগুনের ভিডিও ইউটিউব এবং ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তি এবং করোনাভাইরাসের মধ্যে সম্পর্ক আছে। কর্তৃপক্ষ এখন এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করে দেখছে।
ব্রিটেনের কেবিনেট অফিস মন্ত্রী মাইকেল গোভ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে একেবারে ‘আজগুবি কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকারের ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া এবং ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর জোট ‘মোবাইল ইউকে’ বলেছে যেভাবে এ ধরনের গুজব এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে তাতে তারা খুবই উদ্বিগ্ন।
মার্সিসাইডের পুলিশ জানিয়েছে সেখানে শুক্রবার একটি টেলিকমিউনিকেশন বক্সে আগুনের ঘটনা তারা তদন্ত করে দেখছে। এই অগ্নিকাণ্ডের একটি ভিডিও ইউটিউবে শেয়ার করা হয়েছে। এটি দেখে মনে হচ্ছে রাত ১০টার সামান্য পরে সেখানে এই অগ্নিকাণ্ডের শুরু। বিবিসির ‘ডিসইনফরমেশন টিম’ যাচাই করে ভিডিওটি আসল বলেই মনে করছে। তবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের সঙ্গে এই টেলিকমিউনিকেশন বক্সের সম্পর্ক পরিষ্কার নয়।
মার্সিসাইডের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, লিভারপুলের উত্তরে মেলিং গ্রামে আরেকটি ফাইভ-জি টাওয়ারে শুক্রবার রাতে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন তারা নিভিয়েছে। সেই ঘটনাও তারা তদন্ত করছে। ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বার্মিংহ্যামে ৭০ ফুট উঁচু একটি টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারে আগুন ধরে যায়। আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি। এই টাওয়ারটি ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের কি-না সেটি তারা নিশ্চিত করেনি।
ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, একটা মোবাইল ফোন টাওয়ারে যে আগুন লেগেছে তা আমরা জানি। তবে এ নিয়ে আরো তথ্যের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এর আগে সরকারের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এর সময় মন্ত্রী মাইকেল গোভ জানান, ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের সাথে কোভিড-নাইনটিনের সম্পর্ক আছে বলে যেসব গুজব এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে তা কেবল আজগুবিই নয়, বিপদজনকও বটে।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলফ সার্ভিসের পরিচালক স্টিফেন পাওয়িস বলেন, সাধারণ মানুষকে যখন ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে তখন তাদের জন্য এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে সেখানেও ফাইভ-জি নেট ওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যে নেটওয়ার্ক কি-না আমাদের বর্তমান জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় খুবই প্রয়োজন, কিছু মানুষ যে তার বিরুদ্ধে কাজ করছে, সেটা জেনে আমি খুবই ক্ষুব্ধ। মানুষ যখন এই সংকটের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যায় ঘরে বসে কাজ করছে, ইমার্জেন্সি সার্ভিস থেকে শুরু করে হাসপাতাল এবং ঝুঁকিতে থাকা গ্রাহকদের জন্য যখন মোবাইল সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তখন এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই নেটওয়ার্ক চালু রাখা, এর সক্ষমতা বজায় রাখার কাজ এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে।
‘মোবাইল ইউকে’ বলেছে যেসব লোকজন ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের ব্যাপারে এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াচ্ছে এবং টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামোর ওপর হামলা করছে, তাদের দিক থেকে অনেক নেটওয়ার্ক কর্মী হয়রানি এবং হুমকির শিকার হয়েছেন।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বে কী বলা হচ্ছে
করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের সম্পর্ক আছে বলে যারা দাবি করে, তারা এ বিষয়ে তাদের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেই চলেছে। অথচ এমন প্রমাণ আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি যে ফাইভ-জি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো রকমের হুমকি তৈরি করে। ‘ফুল ফ্যাক্ট’ নামের একটি সংস্থা ভুয়া খবর এবং তথ্য যাচাই করে। তারা দেখেছে, ফাইভ-জি নিয়ে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব গড়ে উঠেছে দুটি ভুল তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে।
একটি তত্ত্বে বলা হয়, ফাইভ-জি নাকি মানুষের রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা দমিয়ে রাখে। আরেকটি তত্ত্বে দাবি করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে ভিকটিম বাছাই করছে এবং এভাবে আরো দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
ফাইভ-জি মোবাইলে আগের তুলনায় ভিন্ন ধরনের এক রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। তবে এই রেডিও তরঙ্গ ‘নন-আয়োনাইজিং’, অর্থাৎ মানুষের দেহে কোনো কোষের ডিএনএ তে যে কেমিক্যাল বন্ড থাকে, সেটি ভাঙার ক্ষমতা এই রেডিও তরঙ্গের নেই। কাজেই এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো হুমকি নয়।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বকারীরা তাদের অপপ্রচারের জন্য দ্বিতীয় যে তত্ত্বটি বেছে নিয়েছে, সেটি এক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জীববিজ্ঞানীর। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ব্যাকটেরিয়া রেডিও তরঙ্গ তৈরি করতে পারে। কিন্তু এই তত্ত্বটি একেবারেই বিতর্কিত এবং বিজ্ঞানের মূলধারার মানুষের কাছে এটি একেবারেই গুরুত্ব পায়নি। আর দুটি তত্ত্বেরই একটা বড় দুর্বলতা হচ্ছে, ব্রিটেনের যেসব শহরে এখনো ফাইভ-জি নেই, সেখানেও করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে। আর ইরান আর জাপানে তো এখনো ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুই হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জে. এম. তারেক হোসেন। বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগঃ সিটিজি ডেইলি নিউজ, ই-মেইলঃ admin@ctgdailynews.com বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগঃ contact@ctgdailynews.com, ctgdailynewsbd@gmail.com
all rights reserved by সিটিজি ডেইলি নিউজ © 2020 Developed by Shahe Arman
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জে. এম. তারেক হোসেন। বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগঃ সিটিজি ডেইলি নিউজ, ই-মেইলঃ admin@ctgdailynews.com বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগঃ contact@ctgdailynews.com, ctgdailynewsbd@gmail.com
all rights reserved by সিটিজি ডেইলি নিউজ © 2020 Developed by Shahe Arman