রবিবার • ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ ইং • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ •  ২রা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী ( বিকাল ৫:১৯ ) 

ব্রেকিং নিউজঃ
বিসিএস পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে কোটি টাকার মালিক তিনি!মওদুদ আহমদের মৃতদেহ আসবে বৃহস্পতিবারব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেইরোজায় ছয় পণ্যের ঘাটতি হবে না১০ দিন আগে ট্রেনের টিকিট কেনা বন্ধ হচ্ছেফটিকছড়িতে তোতা হত্যা মামলার ৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডইউপি সদস্যকে গুলি করে হত্যা, ছেলে গুলিবিদ্ধদুদকের চিঠি ইমিগ্রেশনে পৌঁছানোর ১৩ মিনিট আগেই দেশত্যাগ করেন পি কে হালদার৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা: প্রধানমন্ত্রী৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন ১১ এপ্রিলবাংলা ব্রাউজার ‘দুরন্ত’র যাত্রা শুরুআরও টিকা কেনা হবে, প্রধানমন্ত্রীজনগণ ভোট দেবে না জেনেই বিএনপি সরে দাঁড়িয়েছে: ওবায়দুল কাদেরচেক জাল করে ৩৬ লাখ টাকা লুটপাট!
রবিবার • ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ ইং • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ •  ২রা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী ( বিকাল ৫:১৯ ) 

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস

ডেস্ক রিপোর্ট : ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির একটা প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘Give blood and make the world a healthier place’

১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।

অস্ট্রিয়ার বংশোদ্ভূত জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যানস্টেইনার ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০০ সালে মতান্তরে ১৯০১ সালে ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কার করেন। তার এই আবিষ্কার উন্মোচন করে দিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিশাল অধ্যায়। রক্ত পরিসঞ্চালনের সঠিক পদ্ধতি। এর আগে রক্তদানের বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না। তিনি ১৯৩০ সালে ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাইজ পান। তার জন্মদিনে তাকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে ১৪ জুন উদযাপন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।

প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর, আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে আসছে রোগীদের। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। তবে আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। আমাদের দেশের রক্তদাতার প্রধান উৎস হলো রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনার। যেমন- আপনার প্রয়োজনে আপনার আত্মীয়-স্বজর এসে রক্ত দিল। আর স্বেচ্ছায় রক্তদান হয়ত নির্দিষ্ট সময় পরপর, কে রক্ত পাবে, কোথায় যাবে, কি হবে কিছুই সে জানতে পারবে না। এই স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। আমাদের দেশে বছরে প্রায় ৮ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। বিশ্ব সংস্থা এর একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় এর মধ্যে সাত লাখ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয় সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। এই সাত লাখের মধ্যে ৩১ শতাংশ হলো- স্বেচ্ছায় রক্তদাতার মাধ্যমে আর বাকিটা রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনারের মাধ্যমে আসে। তাই বছরে এখনও কিন্তু এক লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৬২টি দেশে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি এক হাজারে ৪০ জন এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি হাজারে ৪ জনেরও কম।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রক্তের চাহিদা বেশি কিন্তু এসব উন্নয়নশীল দেশেই স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীর সংখ্যা কম। আমাদের বেশির ভাগের মনে রক্তদানের ক্ষেত্রে ‘ভয়’ বাধা হিসাবে কাজ করে। ১৯৫৩, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালে রক্ত ঝরানো জাতির কাছে ‘মোটা সুই’ এর অযৌক্তিক ভয় মোটেই কাম্য নয়। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির উচিত স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসা। কারণ নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান।

১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোন সুস্থ ব্যক্তি যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১০ ভাগের ১ ভাগ। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রকৃতিক নিময়েই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না বরং শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণ ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়।

রক্তদান আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বও বটে। এটা সম্পূর্ণ মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক কার্যক্রম। এর মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে, এমনকি ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং আসুন, আমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠি একেকজন রক্তযোদ্ধা এবং উৎসাহিত করি স্বেচ্ছায় রক্তদানে। স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী আড়ালে থাকা সেসব মানুষের উদ্দেশে, এসব অজানা বীরের উদ্দেশে, উৎসর্গীকৃত ১৪ জুনের বিশ্ব রক্তদান দিবস।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Pinterest
Print