রবিবার • ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ ইং • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ •  ২রা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী ( দুপুর ২:২২ ) 

ব্রেকিং নিউজঃ
বিসিএস পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে কোটি টাকার মালিক তিনি!মওদুদ আহমদের মৃতদেহ আসবে বৃহস্পতিবারব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেইরোজায় ছয় পণ্যের ঘাটতি হবে না১০ দিন আগে ট্রেনের টিকিট কেনা বন্ধ হচ্ছেফটিকছড়িতে তোতা হত্যা মামলার ৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডইউপি সদস্যকে গুলি করে হত্যা, ছেলে গুলিবিদ্ধদুদকের চিঠি ইমিগ্রেশনে পৌঁছানোর ১৩ মিনিট আগেই দেশত্যাগ করেন পি কে হালদার৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা: প্রধানমন্ত্রী৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন ১১ এপ্রিলবাংলা ব্রাউজার ‘দুরন্ত’র যাত্রা শুরুআরও টিকা কেনা হবে, প্রধানমন্ত্রীজনগণ ভোট দেবে না জেনেই বিএনপি সরে দাঁড়িয়েছে: ওবায়দুল কাদেরচেক জাল করে ৩৬ লাখ টাকা লুটপাট!
রবিবার • ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ ইং • ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ •  ২রা জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী ( দুপুর ২:২২ ) 

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চিকিৎসক দম্পতি!

মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক চিকিৎসক দম্পতি। এই দম্পতি হলো ডা. মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন আহমেদ প্রধান ও তার স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান। এই চিকিৎসক দম্পতির ৪৮টি ব্যাংক হিসাবে ২৩ কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। প্রশ্ন ফাঁস মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলারও প্রস্তুতি চলছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ময়েজ উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তবে তার স্ত্রী নিজ বাসাতেই রয়েছেন।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, ময়েজ উদ্দিন ও সোহেলী জামান ছাড়াও আরও প্রায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে তারা মানি লন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, ‘ময়েজকে গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তার স্ত্রীর ব্যাংক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া অন্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে।’

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ডা. ময়েজ। প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু’র সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক। পারভেজ, সানোয়ার, দিপুসহ এই চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এই চিকিৎসক দম্পতির নাম উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকেই মূলত তারা ময়েজের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন। তবে এর আগেই বিষয়টি জানতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান ময়েজ।


ডা. সোহেলী জামানতদন্ত সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ময়েজ উদ্দিনের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৩৯টি হিসাব ও এফডিআর পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে তিনি বিভিন্ন সময়ে মোট ১৯ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৯ টাকা জমা করেছেন। এর মধ্যে তিনি ১৮ কোটি ১৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা উত্তোলন করে ফেলেছেন। এছাড়া ময়েজের নামে রাজাবাজারে একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী সোহেলী জামানের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৯টি হিসাব ও এফডিআর পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে একই সময়ে তিনি ৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৫১ টাকা জমা করেন। তবে এরই মধ্যে তিনি ৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৮ টাকা উত্তোলন ও স্থানান্তর করেছেন।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ময়েজ মূলত চোখের ডাক্তার। জসিম ও তার পরিবারের সদস্যরা চোখের সমস্যা সংক্রান্ত চিকিৎসায় ময়েজের কাছে যাওয়ার সূত্র ধরে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ২০০৬ সাল থেকে তারা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রশ্ন ফাঁস শুরু করেন।

সূত্র জানায়, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ফেইম নামে ময়েজ একটি মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন। সেই কোচিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করাই ছিল তার প্রধান কাজ। তার স্ত্রী সোহেলী জামানও ফেইম কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউশনে কর্মরত ডা. সোহেলী জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমার নিজের কোনও অর্থ নেই। আমার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ময়েজ এসব অর্থ লেনদেন করেছেন। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না।’

গত বছরের ১৯ এবং ২০ জুলাই মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু, মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন ও এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ সময় জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ৪৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের পরপরই প্রশ্নফাঁস চক্রের বিশাল এক সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যায়।


ডা. মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন আহমেদ প্রধান১৪ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার সুপারিশ

ময়েজ-সোহেলী জামানসহ প্রশ্নফাঁসকারী এই সিন্ডিকেটের মোট ১৪ জনের সন্ধান পেয়েছে তদন্ত সংস্থা-সিআইডি, যাদের বিরুদ্ধে সিআইডির পক্ষ থেকে মানি লন্ডারিং মামলা দায়েরের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, তারা হলেন—চিকিৎসক দম্পতি ময়েজ উদ্দিন ও সোহেলী জামান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু, জসিমের স্ত্রী পারভীন আরা জেসমিন, জসিমের বড় বোন শাহজাদী আক্তার মীরা, মীরার স্বামী আলমগীর হোসেন, জসিমের আরেক বোন জামাই জাকির হাসান দীপু, মোহাম্মদ আব্দুস ছালাম, রাশেদ খান মেনন, এম এইচ পারভেজ খান, ডা. জেড এম এস সালেহীন শোভন, সাজ্জাত হোসেন ও আলমাস হোসেন শেখ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশ্নফাঁসকারী এই চক্রের সদস্যদের নামে সারা দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৩৫টি হিসাবে ৬৫ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৩ টাকা অবৈধভাবে আয় করার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে অভিযুক্তরা প্রায় ৬৪ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করে স্থানান্তর করে ফেলেছে। এছাড়া অভিযুক্ত এই ১৪ জনের নামে-বেনামে ৭৪টি দলিলে ৪২ একর জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এই সম্পত্তির দলিল মূল্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষের এই সম্পত্তির মূল্য দলিলমূল্যের অন্তত তিনগুণ বলে মন্তব্য করেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে একটি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস করে অবৈধভাবে যারা অর্থ উপার্জন করেছেন ও সুবিধাভোগী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেই মানিলন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি চলছে। এটি হলে তাদের সম্পত্তি আদালতের নির্দেশে ক্রোক বা জব্দ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া যাবে। অপরাধীদের জন্য এটি একটি বিশেষ বার্তা দেওয়া হবে যে, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করলেও তা শেষ পর্যন্ত ভোগ করা যায় না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Pinterest
Print